মোঃ জুয়েল মাষ্টার, নিজস্ব প্রতিনিধি।
বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া রূপসা থেকে পাথুরিয়া প্রতিটি প্রান্ত থেকে উঠে আসছে এক ভয়াবহ চিত্র—দুর্নীতির প্রমাণসহ তথ্য প্রকাশ করলেই বদলি করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে,আর ভয়ংকর চাপে ফেলা হচ্ছে সেই গনমাধ্যম কর্মীদের যাঁরা এসব অনিয়ম জনসমুক্ষে প্রকাশ্যে আনছে।
বাংলাদেশে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া রুপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত যেখানেই সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে,সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ‘জনস্বার্থে বদলি’ করা হয়েছে। অথচ সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী,যদি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তার যথাযথ প্রমাণ থাকে,তাহলে সুস্পষ্ট তদন্ত এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
যেরকম – সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ধারা ৩(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী,
কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অসদাচরণের অভিযোগ উত্থাপিত হয়,তাহলে সঠিক তদন্ত ও শুনানির মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে,অনেক ক্ষেত্রেই তদন্ত ছাড়াই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলি করা হচ্ছে, যাতে ঐ কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা বিচার কার্যক্রম ধামাচাপা পড়ে যায়।
এসব দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর অনেক গনমাধ্যম কর্মীর উপর বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র বা ক্ষমতাশালী মহলের রোষানলে পড়ছেন। হুমকি,মামলা,শারীরিক হামলার সবশেষে পরিকল্পনা করে প্রাণ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।অথচ বাংলাদেশে গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে একাধিক আইন ও নীতিমালা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন,২০১৮-এর ৮ ধারা অনুযায়ী,
“কোনো সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মী তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হুমকি বা হামলার শিকার হলে,তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তদন্তযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
বাংলাদেশে জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা, ২০১৭ অনুসারে
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য তাছাড়া সাংবাদিকদের তথ্য অনুসন্ধান ও প্রকাশের স্বাধীনতায় কোনো ভাবেই বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নীতিমালা অনুযায়ী,সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ১৯ অনুযায়ী:
কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসাধু কর্মকান্ডের তথ্য পেলে কমিশন বাধ্য থাকবে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে।
কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এসব নীতির হচ্ছে না বললেই চলে।
এখন আমার প্রশ্ন আমরা যারা গণমাধ্যম কর্মী আছি আমরা কি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য থেকে সরে দাঁড়াবো?
গণমাধ্যম কোনো পক্ষ নয়,সত্যের অনুসন্ধানই যার একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য ।কিন্তু যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই সাংবাদিকদের পিছনে লাগিয়ে দেওয়া হয় সন্ত্রাসী বাহিনী,দেওয়া হয় হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা,কেরে নেওয়া হয় প্রাণ!তাহলে প্রশ্ন উঠে রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা নিয়ে।
বাংলাদেশের সকল সাংবাদিক ও জাতি জানতে চায় ,
কেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে,কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে?
কেন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না?
সর্বোপরি সমস্ত গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষ থেকে উত্তর স্থানে এসে আমার ও আমাদের গণমাধ্যমের দাবি
১. কোন সরকারি কর্মকর্তা বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ উঠে সেক্ষেত্রে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত,ও কর্মকর্তাকে বদলি না করে সাময়িক বরখাস্ত করে,তদন্তের আওতায় আনা।
২. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যদি কেউ হুমকি ও হামলার, মামলার শিকার হয় তাহলে বিশেষ তদন্ত সেল গঠন করতে হবে।
৩. দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে উৎসাহিত করতে উইসেল ব্লোয়ার সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চালু করতে হবে।
যদিও গনমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করার কারণে গনমাধ্যম আজ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে।বিশেষ করে বাংলাদেশে সত্যের পক্ষে কলম ধরা যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।রাষ্ট্রীয় অবস্থায় যারা আছেন, তারা যদি দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দিয়ে,সত্য বলার অপরাধে যদি গণমাধ্যম কর্মীদের রক্তাক্ত করে—তাহলে ইতিহাস নিশ্চুপ থাকবে না। বরং এদেশের ভবিষ্যৎ হবে ভয়াবহ তলিয়ে যাবে এদেশের গণতন্ত্র , হারিয়ে যাবে এ দেশের বাক স্বাধীনতা যে স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে লাখো লাখো বাঙালির ইজ্জত হারিয়েছিল হাজারো মা-বোনেরা। তাই এদেশে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন তাদের কাছে এ দেশের সকল গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষ থেকে গনমাধ্যম কর্মীদের সঠিক নিরাপত্তা ও তাদের সচ্ছলভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।