মোঃ জুয়েল মাষ্টার, নিজস্ব প্রতিনিধি।
আওয়ামী সরকারের ১৬ বছরের সীমাহীন,দুর্নীতি,জেল, জুলুম, নির্যাতন,গুম ও হত্যায় সারাদেশের মানুষ একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছিল।সাধারণ মানুষের উপর জুলুম,নির্যাতন,গুম খুনের পাশাপাশি মানুষের সম্পদ জোরপূর্বক দখল এবং চাঁদাবাজিতেও রেকর্ড গড়েছিল মাফিয়া সরকারের মন্ত্রী,এমপি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মী পর্যন্ত।
দেশের গণমাধ্যমগুলোর টুটি চেপে দাশে পরিণত করেছিল।জালিম সরকারের এসব অপশাসনের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তার ব্যক্তি জীবন থেকে পারিবারিক জীবন পর্যন্ত বিপর্যয় নেমে আসতো।
গোটা দেশটাই যেন নিকৃষ্ট কারাগারে পরিণত ছিল।
সীমাহীন এই জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় দেড়যুগ আন্দোলন,সংগ্রাম করে বারবারই ব্যার্থতায় পর্যবাসিত হয়েছিল।
অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশের মানুষের জন্য আশির্বাদ হয়ে,আন্দোলন শুরু করে,স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা।যদিও চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্দোলন জোরদার হলে,ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে মন্তব্য করলে, আন্দোলনের গতি তীব্রতা বেড়ে ৯ দফার পরিবর্তে এক দফা অর্থাৎ শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে যোগ দেয় এবং হাসিনা গংদের পতন হয়।
৫ আগস্ট, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয় এবং ১৬ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটে।
জুলাই ২০২৪ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছয় জন সাংবাদিক সহ প্রায় দুই হাজার শহীদ ও চল্লিশ হাজার পংগুত্ব বরণকারী মুক্তিকামী মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ। ৫ই আগষ্ট আওয়ামীগ সরকারের পতন হলে,নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। মানুষের চোখেমুখে দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত,
সন্ত্রাসমুক্ত, ভয়-ভীতি হীন, সুখী সমৃদ্ব এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে।
বাস্তবে কি স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ পেয়েছে দেশের সাধারণ জনগণ?
প্রত্যাশা প্রাপ্তির দাড়িপাল্লায় কার ওজনই বা বেশী?
নাকি উল্টো শর্ষের মধ্যেই ভূত রয়ে গেছে?
অন্তরবর্তীকালীন সরকারের গেল এক বছরে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ছিল বিচার, সংস্কার আর নির্বাচন। নজিরবিহীন সেই অভ্যুত্থান এক বছরে দেশকে কতটা বদলাতে পেরেছে, সেই প্রশ্নও জনপরিসরে রয়েছে।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যদি চাওয়া পাওয়ার হিসেব করি, তাহলে বলতে পারি; এক বছরে স্বাধীন মত প্রকাশ করার সেই অধিকার ও পায়নি দেশের সাধারন মানুষ, কোনো উল্লেখ্যোগ্য পরিবর্তন হয়নি দেশে।
তবে চাঁদাবাজির সংবাদ প্রকাশের জেরে,গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন কে হত্যার ঘটনার পর স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ব হতে চলেছে।
গত বৃহস্পতিবার, ৭ই আগস্ট ২০২৫ইং
গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। রাত ৮টার দিকে মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তুহিন পরিবার নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বাস করতেন।
এর আগে গতকাল (বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫) গাজীপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে ভুয়া সাংবাদিক দাবি করে,আনোয়ার হোসেন সৌরভ নামে আরেক সাংবাদিককে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেঁতলে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। থানার মাত্র ২০০থেকে ৩০০ গজের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে এমন ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।
সৌরভ দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এর কিছুদিন আগে ২০২৫ সালের ৯ জুলাই রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে, মোঃ সোহাগ ওরফে লাল চাঁদ নামে ৩৯ বছর বয়সী এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে চাদার দাবিতে,কয়েকজন দুর্বৃত্ত জনসমক্ষে পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনাটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং জাতিকে স্তম্ভিত করে তোলে। হত্যাকাণ্ডটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
পরপরই সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয়তাবাদী যুবদল,স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকে নিজ নিজ সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই ২০২৫) সন্ধ্যায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় বহিষ্কৃতরা আসামি।
সংগঠন তিনটি জানিয়েছে,বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না। সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠন তিনটি।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়ার সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকিকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
চাঁদাবাজিতে পিছিয়ে নেই জুলাই অভ্যুত্থানের কারিগর, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকায় থাকা শীর্ষ নেতাদের দল এনসিপিও। সম্প্রতি এনসিপির নেতাদের বিভিন্ন চাঁদাবাজির সংবাদ গণমাধ্যমে উঠে আসে। গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার রাতে ফুলবাড়ী-মিঠাপুকুর রোডে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে সেনা কল্যান সংস্থার ট্রাক আটকে চাঁদাবাজির সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)নেতা তারিকুল ইসলামকে (৪০) আটক করে সেনাবাহিনী।